Wednesday, March 2, 2011

বাংলাদেশের ভূমি আইন সংস্কার করা জরুরী

এদেশের সিংহ ভাগ মামলাই সংঘটিত হয় ভূমি বিষয়ক জটিলতাকে কেন্দ্র করে।আর এর ফলে অপচয় হয় প্রচুর অর্থ এবং শ্রমের।এটির মূল কারন উপনিবেশিক আমলের ভূমি ব্যবস্হাপনা বিষয়ক আইন কানুন।

আমাদের অতি জরুরী ভিত্তিতে এই সকল ভূমি বিষয়ক জটিলতা থেকে মুক্ত হওয়া দরকার।মধ্যযুগীয় ভূমি আইনের কবলে পড়ে যে জাতীয় অপচয়ের সম্মুখীন হচ্ছি আমরা তা সত্বর ধ্বংস ডেকে আনবে আমাদের।

তাই সবাইকে সচেতন হয়ে ভূমি আইন সংস্কার কল্পে এগিয়ে আসতে হবে।

ইভটিজিংয়ের সেকাল, একাল ও আমাদের মিডিয়া। (Eve teasing, it's past, present and our media.

বর্তমানে এদেশে আলোচিত একটি বিষয় হচ্ছে ইভটিজিং। অতীতে ইভটিজিং থাকলেও এতোটা আলোচিত হয়নি এখনকার মত। তার মানে কি ইভটিজিং এদেশে নতুন কোন সামাজিক বাজে উপসর্গ। কিংবা মোবাইলে উক্তত্য করার মতো কোন আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর পশুত্ব। আদপে কিন্তু তা নয়। ইভটিজিং এদেশে অনেক আগে থেকেই ছিল। এবং কোন কোন ক্ষেত্রে এখনকার চাইতে অনেক জোরালো ভাবেই ছিল। আমদের অতীত প্রজন্মের মানুষেরা কি বলতে পারবেন তারা ইভটিজিং দেখেন নি বা এ বিষয়টার সাথে পরিচিত নন? অতীত প্রেক্ষাপটে আমাদের সমাজে ইভটিজিং প্রচলিত ছিল প্রবীনেরা অবশ্যই সেটি স্বীকার করবেন। আমাদের বাংলা চলচ্চিত্রের কিছু দৃশ্যের কথা এখনো আমার মনে পড়ে যেগুলো তৈরী হয়েছিল মূলত সত্তর কিংবা আশির দশকে। সে সব চলচ্চিত্রে দেখা যেত নায়করা প্রেম নিবেদনের কৌশল হিসেবে গানে গানে বা অন্যভাবে ইভটিজিং এ নিয়জিত হচ্ছেন। অর্থাৎ নায়িকাকে পটাতে হলে তার শুরুটা হবে ইভটিজিং জাতীয় বিষয় দিয়ে। এ বিষয়টা নিশ্চয় সমাজ থেকেই আরোহিত। বা সংখ্যা গরিষ্ঠ পুরুষ দর্শকের মানস রুচির পরিপুরক ছিল চলচ্চিত্রে স্থান পাওয়া এ সকল দৃশ্য তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এ তো গেল চলচ্চিত্র বা সিনেমার কথা এবার আসা যাক বাস্তবে। আমি নিজে আশির দশকে মোটামুটি শিশু বা কিশোর থাকা অবস্থায় স্ব-চক্ষে কিছু ইভটিজিং এর ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছি। ছোট ছিলাম বলে বড় বোনদের সাথে বিভিন্ন স্থানে যেতে হত আমাকে। বড় বোনদের সাথে যাতায়াতের সুবাদে দেখেছি রাস্তাঘাটে কিভাবে তাদের বিড়ম্বনায় পড়তে হত। অশ্লীল মন্তব্য বা গান ইত্যাদি তো ছিল সাধারন বা নৈমত্তিক ব্যাপার। স্কুলে যাওয়ার সময়ও স্কুলে পড়–য়া আমদের বড় বোনদের প্রতি অনেক ইভটিজিং এর ঘটনা আমরা অবাক হয়ে প্রত্যক্ষ করেছি। এখন একটা স্বাভাবিক প্রশ্ন উঠতে পারে তাহলে এতদিন ইভটিজিং নিয়ে এতোটা হইচই কেন হয়নি? অতি স্বাভাবিক জিজ্ঞাসা। এর নানাবিধ উত্তর হতে পারে। তবে আমার কাছে যেটি প্রধান বলে মনে হয় সেটি হল মিডিয়ার (প্রিন্ট এবং ইলেকট্রনিক্স) প্রসার কম থাকা। আরেকটি মূল এবং প্রধান বিষয় ছিল সামাজিক লোক লজ্জার ভয়ে ইভটিজিং এর শিকার বা তাদের পরিবারগুলোর বিষয়টিকে প্রকাশ না করা।
কালের বিবর্তনে আমাদের সমাজে অনেক পরিবর্তন এসেছে। মানুষের চিন্তাগত পরিবর্তন তো বটেই, সে সাথে প্রযুক্তিগত পরিবর্তনও মানুষের চিন্তা ভাবনাকে পরিবর্তিত করেছে অনেকখানি। এখন যে কোন প্রান্তের যে কোন ঘটনা সারা দেশে জানাজানি হচ্ছে অতিদ্রুত মিডিয়ার কল্যানে। সে সকল ঘটনার ফলাফলও মানুষের জানা হয়ে যাচ্ছে। মানুষ তার ব্যক্তিগত সমস্যার সাথে ঘটে যাওয়া সমস্যাগুলোর মিল খুঁজে নিয়ে করনীয় স্থির করতে পারছে। ফলে স্ব-সমস্যার সমাধানে মানুষ হয়ে উঠছে আরো সক্রিয় এবং প্রতিবাদ মুখর। আর এই প্রতিবাদের ফলে ইভটিজিং বা এ জাতীয় ঘটনাগুলো উঠে আসছে সবার সামনে। ফলে জনমত ঘটিত হচ্ছে সহজেই এসব বিষয়ে। আলোচনা হচ্ছে বা সমালোচনা হচ্ছে।
সুতরাং বলতে হবে বর্তমানে ইভটিজিং বা এসকল নির্যাতনের বিপক্ষে জনমত গঠনের বিষয়ে মিডিয়ার একটি বিরাট ভ’মিকা রয়েছে। জনসমক্ষে তুলে এনে সবাইকে এক কাতারে নিয়ে আসার কাজটি করছে মিডিয়াই সে প্রিন্ট বা ইলেকটনিক্স যে ধারাই হোক। মিডিয়ার ভ’মিকা নিয়ে নানা বিধ প্রশ্ন থাকলেও মিডিয়ার এজাতীয় ইতিবাচক ভ’মিকার প্রয়োজনীতা অবশ্যই আমাদের স্বীকার করতে হবে। তবে এ সকল ক্ষেত্রে মিডিয়ার কিছু দায়বদ্ধতাও আছে যেমন, নির্যাতিতার সামাজিক সম্মান রক্ষা, তাকে শ্লীলভাবে উপস্থাপন করা ইত্যাদি। এগুলো মাথায় রেখে চলতে পারলে ইভটিজিং বা নির্যাতন বন্ধে মিডিয়া আরো বেশি পরিপূর্ণতা পাবে নিঃসন্দেহে।
অতীতে এদেশে ভয়াবহ নারী নির্যাতন বা ইভটিজিং এর ঘটনা ঘটলেও সেগুলোর বেশিরভাগই কেউ জানতে পারেনি। বা নির্যাতিতরা মুখ খোলেনি। কিন্তু এখন সময় বদলে গেছে। মানুষ এখন অনেক সচেতন ও সোচ্চার। নির্যাতি হয়ে কেউ আর এখন মুখ বুঁজে সহ্য করে না। মানুষ প্রতিবাদের ভাষা শিখেছে বা শিখছে। ভবিষ্যতে আরো প্রতিবাদি হয়ে উঠবে অন্যায়ের বিরুদ্ধে ও অমানবিকতার বিরুদ্ধে।

Sunday, October 5, 2008

ওয়ারী বটেশ্বরের প্রত্ন সম্পদ (Archeological treasure of Wari Batashawr)

















কিছু প্রত্ন নিদর্শনের ছবি









মাটির একটি ঘরে ব্যক্তিগত উদ্যোগে তৈরি হয়েছে একটি প্রত্ন সংগ্রহশালা ও গ্রন্হাগার। তাও আবার নিজ বাড়ির মধ্যে। বিষয়টি বেশ চমৎকৃত করার মত। নরসিংদী শহর পেরিয়ে ঢাকা সিলেট মহাসড়ক থেকে বেশ কয়েক মাইল পশ্চিম দিকে এক প্রত্যন্ত সবুজে ঘেরা গ্রামে সেই ১৯৭৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এই প্রত্ন সংগ্রহশালা ও গ্রন্হাগার। মাটির ঘরে অবস্থিত এই সংগ্রহশালাটিতে একটি সাইন বোর্ডে প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে নাম উল্লেখ আছে, জনাব মো. হানিফ পাঠানের। আর ঠিকানা দেওয়া আছে পো. বটেশ্বর, বেলাব, নরসিংদী। আর এই সংগ্রহশালায় রক্ষিত আছে খ্রীষ্টপূর্ব সময়ের মূল্যবান কিছু প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। বর্তমানে এটি রক্ষনাবেক্ষন করছেন প্রতিষ্ঠাতা জনাব হানিফ পাঠানেরই পুত্র সাবেক স্কুল শিক্ষক জনাব হাবিব উল্ল্যা পাঠান। শুধু রক্ষন কার্য বললে ভুল হবে তিনি তাঁর সীমিত সাধ্যে যতটা পারছেন উক্ত ওয়ারী বটেশ্বর এলাকায় প্রাপ্ত প্রত্ন সম্পদ নিয়ে চর্চা ও প্রচারের কাজ করে যাচ্ছেন।
জনাব হাবিবের কাছ থেকে জানা যায়, ব্রক্ষপুএ নদীর অববাহিকায় অবস্থিত হওয়ার কারনে ঐ এলাকায় খ্রীষ্টপূর্ব সময়ে তৈরি হয়েছিল একটি সভ্যতা। এখানে বানিজ্য কেন্দ্র গড়ে উঠেছিল এবং অন্যান্য অঞ্চলের সাথে ছিল এই অঞ্চলের ব্যবসায়িক যোগাযোগ। জনাব হানিফ পাঠান কিছু প্রত্ন নিদর্শনের সন্ধান পেয়ে, ১৯৩৩ সালে তৎকালীন আজাদী পত্রিকায় এ নিয়ে একটি প্রবন্ধ লিখে সর্বপ্রথম বিষয়টি সবার গোচরে আনেন। জনাব হাবিব পাঠান বাল্য বয়সে তাঁর পিতার সাথে প্রত্ন সম্পদ সংগ্রহের কাজ করতেন।

এই প্রত্ন সংগ্রহশলায় যে সব প্রত্ন নিদর্শন রক্ষিত আছে তা থেকে কয়েকটির নাম এখানে উল্লখ করছি।
১। ক্ষেপনীয় গোলক (সময় আনুমানিক খ্রীষ্ট পূর্ব)
২। তাম্র বলয় (সময় আনুঃ ১২০-৬০০ খ্রীষ্টাব্দ)
৩। নিবেদন স্তূপ (সময় ১২০০-৫০ খ্রীষ্ট পূর্ব)
৪। শিলপাটা (সময় খ্রীষ্ট পূর্ব -৫০০)
৫। লৌহ কুঠার (সময় খ্রীষ্ট পূর্ব ১০০০)
৬। রৌপ্য মুদ্রা -সুলতান জালাল উদ্দিন মোহাম্মদ শাহ (সময় ১৪১৫-১৪৩৩ খ্রীস্টাব্দ)
৭। ছাপাংকিত মুদ্রা (সময় -খ্রীষ্ট পূর্ব ৫০০-২০০)
এই সকল প্রত্ন নিদর্শন ছাড়াও এখানে আরো কিছু উল্লেখযোগ্য প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন রক্ষিত আছে।
ওয়ারী বটেশ্বর এলাকায় প্রাপ্ত এ সকল প্রত্ন সম্পদে নিয়ে প্রচুর গবেষনা দরকার।সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে এ সকল প্রত্নসম্পদ নিয়ে যথাযথ গবেষনার মধ্য দিয়ে উন্মোচিত হতে পারে হাজার হাজার বছর আগেকার বাঙালি সভ্যতার গৌরবোজ্জ্বল পরিচয়।
আমরা চাই যথার্থ গবেষনার মাধ্যমে তুলে আনা হোক আমাদের ঐতিহ্যের সেই স্বর্ন যুগের ইতিহাস সবার সমানে। এ ক্ষেত্রে বন্কিমচন্দ্রের একটি কথা স্মরন করা যেতে পারে। তিনি লিখেছিলেন, যে জাতির ইতিহাস নাই সে জাতির ভবিষ্যতও নাই।
আমরা চাই আমাদের ইতিহাস উদ্ধারের মধ্যমে ভবিষ্যতের নির্মান সফল হোক।

Tuesday, September 9, 2008

ঢাকার রাস্তায় টোকাই বা পথ শিশু(Street children in Dhaka)


ঢাকা শহরের অতি চেনা দৃশ্য হচ্ছে বাজারে বা রাস্তায় টোকাই বা পথ শিশুদের বিচরন। পরনের ছেড়া প্যান্ট ছাড়া সমস্ত শরীরই থাকে উদাম। কখনও হাতে থাকে বস্তা সেই বস্তা বা থলেতে থাকে রাজ্যের কুড়িয়ে পাওয়া আবর্জনা। দুঃখজনক হলেও সত্যি এরকম দৃশ্য আমাদের এই শহরের অংশ হয়ে গেছে । এই সকল শিশুকে কোন রকম পূর্নবাসন বা ঐ ধরনের কোন উদ্যোগের আওতায় আনার কোন প্রচেষ্টাও দেখা যাচ্ছেনা খুব একটা। এই সকল শিশুর এইরকম অমানবিক হাল কারো কাম্য হতে পারেনা। কিন্তু এই অকাম্য বিষয়টি আমাদের মাঝে বিরাজ করছে অনায়াসে।
নিশ্চিতভাবে বলা যায়, এই সকল শিশুর জন্ম নিতান্ত দরিদ্র পরিবারে। মা বাবাও এরকম অমানবিক অবস্থার মধ্যে আছে। তাই এসকল শিশুরা অনাদর আর অবহেলায় ঠাই নিয়েছে রাস্তায় আর পথে ঘাটে। এদের অনেককে আবার ভিক্ষা করতেও দেখা যায়। বলা যেতে পারে,এরা বড় হচ্ছে অসুস্থ পরিবেশের মাঝে অসুস্থ হয়ে। এরা একদিন বড় হয়ে যে সকল কার্যকলাপে লিপ্ত হবে তা কি সুস্থ হবে? বোধহয়না।
আমাদের দেশে এই সকল অনাদরে বেড়ে উঠা অপুষ্ট শিশুদের জন্য অবিলম্বে পদক্ষেপ গ্রহন করা প্রয়োজন। তা না হলে এই সকল অমানবিক আর অসুস্থ পরিবেশে বেড়ে উঠা শিশুরা বড় হয়ে তৈরি করবে অসুস্থ সমাজ আর পরিবেশের। যা আমাদের কারুরই কাম্য নয়। সামর্থ্যবানরা সবাই মিলে চেষ্টা করলে বোধহয় কিছু করা সম্ভব এই সকল টোকাই বা পথ শিশুদের জন্য।

Sunday, September 7, 2008

রামগতির নদী ভাঙন(River erosion at ramgati)

রামগতি উপজেলা লক্ষীপুর জেলায় অবস্থিত। পূর্বে বৃহওর নোয়াখালী জেলার অধীনে ছিল এ অঞ্চলটি। লক্ষীপুর জেলা শহর থেকে দক্ষিন দিকে রামগতির অবস্হান। প্রাচীন অন্চল হিসাবে রামগতির রয়েছে ঐতিহ্য আর ইতিহাস। বিশেষ করে লোক শিল্পে রামগতির একটি বিশেষ অবস্থান রয়েছে বাংলাদেশে। কিন্তু বর্তমানে রামগতি অঞ্চল এবং এর মানুষজন চরম বিপর্যয়ের সম্মুখীন। আর এই বিপর্যয়ের কারন হলো এখানকার ভয়াবহ নদী ভাঙ্গন।
গত কয়েক বছর ধরে ক্রমাগত নদী ভাঙনে নদী গর্ভে তলিয়ে গেছে বহু এলাকা বাস্তুচুত্য হয়েছে বহু মানুষ । সবকিছু হারিয়ে বহু মানুষ ভোগ করছে চরম দারিদ্রতা আর অমানবিক ক্লেশ। এর ফলে এ অঞ্চলে দেখা দিচ্ছে মানবিক বিপর্যয়। কর্মহীন হয়ে পড়ছে বেশীর ভাগ মানুষ। নারী ও শিশুরা এ নদী ভাঙনের ফলে অসহায় হয়ে পড়ছে সবচেয়ে বেশি। শিশুরা ভুগছে চরম পুষ্টিহীনতায়। শিশুদের এ অমানবিক অবস্থা সত্যিই পীড়াদায়ক।
যে সকল সাহায্য ভাঙন পীড়িত এ সকল মানুষকে এ পর্যন্ত দেয়া হয়েছে তা প্রয়োজনের তুলনায় নিতান্ত অপ্রতুল। এখানে প্রয়োজন আরও ব্যপক সাহায্য ও সহযোগিতা। এ ছাড়া সবচাইতে বেশি দরকার নদী ভাঙন রোধে কার্যকর পদক্ষেপ।

Sunday, August 31, 2008

জলবায়ু পরিবর্তন ও আমাদের কৃষি(Climate change and our agriculture)


জলবায়ু পরিবর্তন কথাটি বর্তমান বিশ্বে বেশ আলোচিত। সর্বত্র এটি নিয়ে চলছে নানান আলোচনা কিংবা বির্তক। মূলত: জলবায়ু পরিবর্তন জনিত সংকট এবং সংকট থেকে উত্তোরন প্রভূতিই এসকল আলোচনার মুল বিষয়বস্তু। বলা যায় বিশ্ববাসীকে বেশ ভাবিয়ে তুলছে এই আবহাওয়া বা জলবায়ু জনিত পরিবর্তন। জলবায়ু প্রকৃতির অনুষঙ্গ। প্রধানত প্রকৃতির সবচাইতে বড় নিয়ামক জলবায়ু বা আবহাওয়া। প্রকৃতির ছন্দ যদি ঠিক ঠাক চলে তা হলে আবহাওয়া আমাদের সাথে বন্ধুত্বপূর্ন আচরন করে। আর সেই ছন্দে গোলমাল হলেই হয় সমস্যা। আবহাওয়া বৈরি হয়ে উঠে এবং তা মানুষের জন্য বিপদ তৈরিকরে। আর আবহাওয়া বা জলবায়ু পরিবর্তন সেই বিপদেরই অশনি সংকেত।
জলবায়ু পরিবর্তনের কিছু কিছু প্রভাব ইতিমধ্যে বিশ্ববাসী দেখতে শুরু করেছে। এরই প্রভাবে ক্রমাগত উষ্ণ হয়ে উঠছে পৃথিবী। পরিবর্তিত হচ্ছে ঋতু চক্র। ঋতুর পুরাতন চেহারা বদলে গেছে বর্তমানে। নদনদীসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক অনুষঙ্গেরও হচ্ছে রূপ বদল। প্রশ্ন উঠতে পারে কেন হচ্ছে এই জলবায়ুর পরিবর্তন? এর জন্য দায়ী বা কে? বিশ্ব প্রকৃতির কথা বাদ দিলে বলতে হবে এর জন্য দায়ী আমরা। মানুষ তার ভোগের জন্য প্রকৃতিকে ব্যবহার করেছে বা করছে নিজেদের ইচ্ছা মত। আর এভাবে তার শোধ নিচ্ছে প্রকৃতি। বাংলাদেশও এর প্রভাব মুক্ত নয়।
বাংলাদেশ একটি কৃষি প্রধান দেশ। এদেশের মানুষের শতকরা হারের একটা বড় অংশ কৃষির উপরে নির্ভরশীল। এছাড়া আয়তনের তুলনায় জনসংখ্যা বেশি হওয়ায় এদেশে কৃষি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন একটি ক্ষেএ। আর মূলত জলবায়ু পরিবর্তনের কু-প্রভাব কৃষির উপরে পড়ে বেশী কারন কৃষি উৎপাদন জলবায়ুর উপর নির্ভরশীল। ঋতুগত পরিবর্তন বাংলাদেশে বেশ প্রকট হয়ে দেখা দিচ্ছে। আগেরকার ঋতুবৈচিত্র্য এখন আর দেখা যায় না। কখনও দেখা যাচ্ছে অত্যাধিক উষ্ণতা আবার কখনো কখনো হচ্ছে প্রচুর বৃষ্টিপাত। ফলে বিঘ্নিত হচ্ছে কৃষি উৎপাদন। এর ফলে দেখা যাচ্ছে খাদ্য সংকট। পর পর ক্রমাগত বন্যায় বিনষ্ট হয় উৎপাদিত শস্য। ঘুর্নিঝড়, জলোশ্বাস প্রভৃতি প্রাকৃতিক দুর্যোগে মানবিক বির্পষয়ের পাশাপাশি বিনষ্ট হচ্ছে সম্পদ। আর ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে কৃষিজ উৎপাদন। মাত্রাতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের ফলে কৃষি জমিতেই বিনষ্ট হচ্ছে ফসল। আবার উৎপাদিত ফসলও সঠিক ভাবে সংরক্ষন করা যাচ্ছে না। জলবায়ু বা আবহাওয়ার যে পরিবর্তন তার জন্য উন্নত দেশগুলি ব্যাপকভাবে দায়ী। কিন্তু এর কুপ্রভাব পড়ছে আমাদের মত দেশগুলিতে। মানুষের জীবন হয়ে পড়ছে বিপন্ন। তৈরি হচ্ছে খাদ্য সংকটসহ নিত্য নতুন সংকট। জলবায়ু পরিবর্তন জনিত সমস্যা সমাধান কোন একটি দেশ বা জাতির পক্ষে সম্ভব নয়, বা এটি কোন দেশ বা জাতির একক সমস্যা নয়, সমস্যাটি সমগ্র বিশ্বের। সুতরাং এই সমস্যা থেকে উত্তোরনের প্রচেষ্টায় সামিল হতে হবে দেশ, জাতি নির্বিশেষে সবাইকে।