Sunday, October 5, 2008

ওয়ারী বটেশ্বরের প্রত্ন সম্পদ (Archeological treasure of Wari Batashawr)

















কিছু প্রত্ন নিদর্শনের ছবি









মাটির একটি ঘরে ব্যক্তিগত উদ্যোগে তৈরি হয়েছে একটি প্রত্ন সংগ্রহশালা ও গ্রন্হাগার। তাও আবার নিজ বাড়ির মধ্যে। বিষয়টি বেশ চমৎকৃত করার মত। নরসিংদী শহর পেরিয়ে ঢাকা সিলেট মহাসড়ক থেকে বেশ কয়েক মাইল পশ্চিম দিকে এক প্রত্যন্ত সবুজে ঘেরা গ্রামে সেই ১৯৭৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এই প্রত্ন সংগ্রহশালা ও গ্রন্হাগার। মাটির ঘরে অবস্থিত এই সংগ্রহশালাটিতে একটি সাইন বোর্ডে প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে নাম উল্লেখ আছে, জনাব মো. হানিফ পাঠানের। আর ঠিকানা দেওয়া আছে পো. বটেশ্বর, বেলাব, নরসিংদী। আর এই সংগ্রহশালায় রক্ষিত আছে খ্রীষ্টপূর্ব সময়ের মূল্যবান কিছু প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। বর্তমানে এটি রক্ষনাবেক্ষন করছেন প্রতিষ্ঠাতা জনাব হানিফ পাঠানেরই পুত্র সাবেক স্কুল শিক্ষক জনাব হাবিব উল্ল্যা পাঠান। শুধু রক্ষন কার্য বললে ভুল হবে তিনি তাঁর সীমিত সাধ্যে যতটা পারছেন উক্ত ওয়ারী বটেশ্বর এলাকায় প্রাপ্ত প্রত্ন সম্পদ নিয়ে চর্চা ও প্রচারের কাজ করে যাচ্ছেন।
জনাব হাবিবের কাছ থেকে জানা যায়, ব্রক্ষপুএ নদীর অববাহিকায় অবস্থিত হওয়ার কারনে ঐ এলাকায় খ্রীষ্টপূর্ব সময়ে তৈরি হয়েছিল একটি সভ্যতা। এখানে বানিজ্য কেন্দ্র গড়ে উঠেছিল এবং অন্যান্য অঞ্চলের সাথে ছিল এই অঞ্চলের ব্যবসায়িক যোগাযোগ। জনাব হানিফ পাঠান কিছু প্রত্ন নিদর্শনের সন্ধান পেয়ে, ১৯৩৩ সালে তৎকালীন আজাদী পত্রিকায় এ নিয়ে একটি প্রবন্ধ লিখে সর্বপ্রথম বিষয়টি সবার গোচরে আনেন। জনাব হাবিব পাঠান বাল্য বয়সে তাঁর পিতার সাথে প্রত্ন সম্পদ সংগ্রহের কাজ করতেন।

এই প্রত্ন সংগ্রহশলায় যে সব প্রত্ন নিদর্শন রক্ষিত আছে তা থেকে কয়েকটির নাম এখানে উল্লখ করছি।
১। ক্ষেপনীয় গোলক (সময় আনুমানিক খ্রীষ্ট পূর্ব)
২। তাম্র বলয় (সময় আনুঃ ১২০-৬০০ খ্রীষ্টাব্দ)
৩। নিবেদন স্তূপ (সময় ১২০০-৫০ খ্রীষ্ট পূর্ব)
৪। শিলপাটা (সময় খ্রীষ্ট পূর্ব -৫০০)
৫। লৌহ কুঠার (সময় খ্রীষ্ট পূর্ব ১০০০)
৬। রৌপ্য মুদ্রা -সুলতান জালাল উদ্দিন মোহাম্মদ শাহ (সময় ১৪১৫-১৪৩৩ খ্রীস্টাব্দ)
৭। ছাপাংকিত মুদ্রা (সময় -খ্রীষ্ট পূর্ব ৫০০-২০০)
এই সকল প্রত্ন নিদর্শন ছাড়াও এখানে আরো কিছু উল্লেখযোগ্য প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন রক্ষিত আছে।
ওয়ারী বটেশ্বর এলাকায় প্রাপ্ত এ সকল প্রত্ন সম্পদে নিয়ে প্রচুর গবেষনা দরকার।সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে এ সকল প্রত্নসম্পদ নিয়ে যথাযথ গবেষনার মধ্য দিয়ে উন্মোচিত হতে পারে হাজার হাজার বছর আগেকার বাঙালি সভ্যতার গৌরবোজ্জ্বল পরিচয়।
আমরা চাই যথার্থ গবেষনার মাধ্যমে তুলে আনা হোক আমাদের ঐতিহ্যের সেই স্বর্ন যুগের ইতিহাস সবার সমানে। এ ক্ষেত্রে বন্কিমচন্দ্রের একটি কথা স্মরন করা যেতে পারে। তিনি লিখেছিলেন, যে জাতির ইতিহাস নাই সে জাতির ভবিষ্যতও নাই।
আমরা চাই আমাদের ইতিহাস উদ্ধারের মধ্যমে ভবিষ্যতের নির্মান সফল হোক।